জ্যোতির্গময়

বিগত বিধানসভা নির্বাচনে কমলনাথের সমক্ষে শিবরাজ যে জিতিতে জিতিতে হার মানিতে বাধ্য হইয়াছিলেন, এবং সেই চকিত পরাজয় যে তাঁহার কিংবা রাষ্ট্রীয় নেতৃবর্গের গ্রীবাদেশে তীক্ষ্ন কন্টক রূপে বিদ্ধ রহিয়া গিয়াছে, তাহা কোনও ত্রিকালজ্ঞই অস্বীকার করিবেন না। অতএব সকাশে জ্যোতিরাদিত্যের প্রকাশ হিন্দুত্ব দলে দ্বিবিধোষ্ণ আনন্দধারার উদ্রেক ঘটাইল।
মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিপ-গড়, অর্থাৎ অধুনা গোয়ালিয়র নগরীর মারাঠা রাজপরিবারের উত্তরসূরি জ্যোতিরাদিত্য যেন তাঁহার পিতামহীর প্রদর্শিত পথেই যাত্রা করিলেন। রাজপ্রমুখ জীবাজি রাও সিন্ধিয়া সন ১৯৫৬-এ রাজ্যপাট হইতে অবসর গ্রহণ করিলে, রাজমাতা বিজয়ারাজে গুনা লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হইয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির কর্মকাণ্ড আরম্ভ করেন; অবশ্য দশক মাত্র পরিক্রমণ হইতে না হইতেই তিনি ১৯৬৭ অব্দে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ভারতীয় জনসংঘে যোগদান করিয়া ক্ষমতাবলে ক্ষুদ্রতর এই সংগঠনেও 'রাজমাতা' রূপেই শীর্ষনাম্নী হন। সংঘের প্রতি অর্থব্যয়ও করিয়াছিলেন অপার। বিজয়ারাজে পশ্চাৎ তাঁহার সুপুত্ৰী বসুন্ধরা রাজে ও যশোধরা রাজেও হিন্দু রাষ্ট্রবাদী ভাজপাতে অংশগ্রহণ করিয়া রাজস্থান প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা মধ্যপ্রদেশের জনপ্রতিনিধি হইয়াছেন।
পুত্র মাধবরাও সদৃশ ভাবধারায় শ্রীগণেশ করিলেও, সপ্তবর্ষ বিচর্চিকার শিকার হইয়া জনসঙ্ঘ ত্যাগ করিয়া কংগ্রেসে যোগদান করেন। সুতরাং হিন্দুত্ব ভাব গোয়ালিওর রাজধমনীতে স্বাভাবিক ধারাতেই বহিয়া চালিয়েছে, এবং তরুণ প্রজন্মের জ্যোতিরাদিত্য ইহার বিন্দুসম ব্যতিক্রম মাত্র নহেন।
আশা করি ভাজপার প্রতি পারিবারিক অবদান, স্বমহিমা, বাগ্মিতা ও পিতৃব্যাদ্বয়ের আশীর্বাদে, নবকলেবরে এহি দলমধ্যে তাঁহার রাজনৈতিক উত্থানে কিঞ্চিৎ বাধার অবকাশ পর্যন্ত রহিবে না। সময়টিও তিনি বাছিয়া লইয়াছেন চাতুর্যের সহিত। শিবরাজ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদে পুনরাসীন হইতে পারিবেন, রাজকুমার জ্যোতিরাদিত্য দিল্লীর রাজসভায় দলের মুখশ্রী বর্ধন করিবেন, এহেন রাজযোগ হস্তস্খলন করিবার মূর্খামি উভয়পক্ষের কেহই বুঝি করিত না। ইহাই বিরল মধুরেণ সমাপয়েৎ। হৃতরাজ্যো লভেদ্ রাজ্যং, হৃতশ্রীর্লভতে শ্রিয়ম্ , কীর্ত্তিহীনো লভেৎ কীর্ত্তিং প্রতিষ্ঠাঞ্চ লভেদ্ধ্রুবম।
- সম্পাদক
চিত্র সত্ত্ব ‘বাংলার মত’ কর্তৃপক্ষের নহে
Post a Comment